#1
|
|||
|
|||
বুকুন (সমাপ্ত)
শুরুর কথা বেশ কিছুদিন ধরে এই গল্পটা লিখছি। ভাবছিলাম আরও কিছুটা লেখা হলে পোস্ট করা শুরু করব। তবে এবার মনে হচ্ছে পাঠকের মতামত নেওয়া উচিত। গল্পটা কেমন হচ্ছে, সেটা জানা দরকার। তাই যতটা লেখা হয়েছে, একবারেই পোস্ট করে দিলাম। এরপরেরগুলো কিস্তিতে পোস্ট করব। এই গল্পটার এক - দুটো লাইন হয়তো সত্যি ঘটনা, বাকিটা পুরোই আমার কল্পনা.. বাস্তবের সঙ্গে কেউ কোনও মিল খুঁজে পেলে তা হবে কাকতালীয় ব্যাপার |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#2
|
|||
|
|||
বুকুন
১. কাল বাড়ি পৌঁছতে বেশ রাত হয়েছে, তারপর মায়ের সঙ্গে একটু গল্পগুজব করে ঘুমিয়েছি। তাই আজ সকালে মা যখন চা নিয়ে ডাকাডাকি করছে, তখন আমি গভীর ঘুমে।এক তো কলকাতা থেকে এতটা জার্নির ক্লান্তি, তারপর অত রাতে ঘুমনো। তাই উঠতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু তারপরেই খেয়াল হল অঞ্জলি দিতে হবে। আজ সপ্তমী। অনেকদিন পরে পুজোর সময়ে গ্রামে এসেছি। রোজই অঞ্জলিটা দেব ভেবে রেখেছি। ঝট করে উঠে পড়ে দরজা খুলে এসে দেখি মা চায়ের কাপটা নিয়ে গিয়ে খাবার ঘরে টেবিলের ওপরে রাখছে। আমাদের এই গ্রামের বাড়িতে ঘরের সঙ্গে লাগানো বাথরুম নেই। তাই মাকে বললাম, ‘চা টা ঢাকা দিয়ে রাখ। আমি বাথরুম থেকে আসছি।‘ ফিরে এসে চা খেয়ে বাথরুমে গিয়ে স্নান করে বেরলাম একেবারে। পিয়ালী - আমার বউ - সুটকেসের কোন জায়গায় যে পাজামা পাঞ্জাবিগুলো দিয়েছে! দুটে পাজামা আর গোটা তিনেক পাঞ্জাবি দিতে বলেছিলাম ওকে। একটু নীচের দিকে ছিল। খুঁজে পেয়ে একটা আকাশী নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়লাম। তারপর সাইকেলটা বার করতে করতে মাকে বললাম, ‘বেরলাম। অঞ্জলি দিয়ে একটু ঘুরে টুরে আসব।‘ ছোটবেলার চেনা জায়গাতে আজকাল আর পুজোটা হয় না। ওখানে বাড়িঘর হয়ে গেছে। তাই একটু দূরের মাঠে সরে গেছে আমাদের গ্রামের বারোয়ারি পুজো। ছোটবেলায় দলবেঁধে সকালবেলা চলে আসতাম প্যান্ডেলে। দুপুরে একটু স্নান খাওয়া করেই আবার সেই রাত অবধি। ঠাকুর দেখতে বেরনোর অত ব্যাপার ছিল না আমাদের তখন। কয়েক বছর পরপর হয়তো কাছের টাউনের দিকে নিয়ে যেত কাকারা কেউ। না নিয়ে গেলেও আমাদের মাথা ব্যাথা ছিল না। পুজোর সময়ে সারাদিন খেলতে পারাটাই আনন্দের। এইসব ভাবতে ভাবতেই সাইকেল নিয়ে পুজোর মাঠে হাজির। একদিকে সাইকেলটা রেখে প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকে দেখি অনেকলোক অঞ্জলি দিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এরপরের বার হয়তো আমার জায়গা হবে। যে ভদ্রমহিলা স্টেজের ওপরে দাঁড়িয়ে সবার হাতে ফুল দিচ্ছিলেন, তার মুখটা বেশ চেনা চেনা লাগছিল। গ্রামেরই কেউ হবে, সেটা তো নিশ্চিত। কিন্তু ঠিক কে, সেটা মনে করে উঠতে পারলাম না। এমনিতেই কলেজের সময়ে থেকে আর গ্রামে থাকি না, আর এখন তো বছরে এক আধবারই আসা হয়! তাই ঠিক চিনতে পারছিলাম না কে ওই ভদ্রমহিলা। প্রথম ব্যাচের অঞ্জলি শেষ হল। সবাই শান্তি জল নিয়ে আস্তে আস্তে জায়গা ছাড়তে শুরু করল। আমি এগিয়ে গেলাম একটু। ওই ভদ্রমহিলা আবারও ফুলের ঝুড়ি নিয়ে সবাইকে ফুল দিতে শুরু করলেন। আগে তো দূর থেকে দেখছিলাম, এখন কাছ থেকে দেখছি। আরও বেশী চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না কে! ভদ্রমহিলা একটা সুন্দর তাঁতের শাড়ি পড়েছেন – লালপাড় দেওয়া। মাথায় সিঁদুর। কাজের সুবিধা হবে বলে শাড়ির আঁচলটা পেঁচিয়ে কোমরে গুঁজে দিয়েছেন। সামান্য মেদ আছে কোমরের কাছে। ঘামে ভিজে গেছে উনার বগলটা। হাত বাড়িয়ে রয়েছি আমি, ফুল নেওয়ার জন্য। আমার দিকে ফুলভর্তি হাতটা এগিয়ে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রমহিলা। তারপর বলে উঠলেন, ‘আরে রবিদা না? কবে এসেছিস?’ গলার স্বরটাও খুব চেনা, আমাকে দাদাও বলে আবার তুই-ও বলে! কিন্তু মনে করতে পারছি না কেন এ কে? আমি মাথা নেড়ে ভদ্রতা করে একটু হেসে বললাম , ‘কাল রাতে।‘ আশপাশের সবাইকে ফুল দিতে দিতেই উনি বললেন, ‘আমাকে চিনতে পারছিস তো, নাকি? আমি একটু বোকা বোকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম যে উনাকে চিনেছি। বুঝতে দিলাম না যে চিনতে পারি নি উনাকে তখনও। ‘কত্তদিন পরে দেখলাম তোকে রে!’ এই একটা শব্দ – ‘কত্তদিন’টা শুনেই মনে পড়ে গেল। এইভাবে কত্তদিন একজনই বলত। ঝট করে মনে পড়ে গেল, বু-কু-ন... আমার ছোটবেলা, বড় হয়ে ওঠার সঙ্গী.. আরও কত কিছু প্রথম পাওয়া ওর কাছ থেকেই ‘বু-কু-ন তো?’ আমার গলায় তখনও একটু অনিশ্চয়তা। ‘যাক চিনেছিস তাহলে! অঞ্জলি দিয়ে চলে যাস না কিন্তু।‘ পুরোহিত মশাই মন্ত্র পড়তে শুরু করেছেন। আমি মা দুর্গার দিকে তাকিয়ে মন্ত্র পড়ছি বিরবির করে আর মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছি বুকুনের দিকে। একবার চোখাচোখিও হয়ে গেল। ও ঠোঁট টিপে একটু হেসে মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে। অঞ্জলির শেষে প্যান্ডেলের বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। কত স্মৃতি ভিড় করে এল মনের মধ্যে। এরকমই একটা পুজোর দিন ছিল সেটা – সরস্বতী পুজো। -- Last edited by uttam4004 : 25th January 2017 at 10:17 PM. |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#3
|
|||
|
|||
২ বুকুন আমার থেকে বছর খানেকের ছোট। কাছাকাছিই বাড়ি, ওর মা কে কাকিমা বলে ডাকি ছোট থেকেই। কাকা বাইরে চাকরী নিয়ে চলে গেল, আর আমি পেলাম কাকার সাইকেলটা। সময় পেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আর টোটো করে ঘুরে বেড়াই বন্ধুরা মিলে। কয়েক বছর আগেই একটু লায়েক হয়েছি। মেয়েদের দিকে নজর টজরও দিতে শুরু করেছি। তবে গ্রাম এলাকা – মেয়েরাও সব এলাকারই কাকা, জেঠাদের – বেশী তাকানোর সাহস হত না। কিছুদিনের মধ্যেই বুকুন বায়না ধরল, ‘এই রবিদা, আমাকেও সাইকেল চালানো শিখিয়ে দে না রে।‘ আমি প্রথম কয়েকদিন একটু দাদাগিরি দেখালাম, ‘না না পড়ে যাবি। কাকিমা বকবে আমাকে।‘ তবুও সে ছাড়ে না, মাঝে মাঝেই বায়না ধরে সাইকেল চালানো শিখবে বলে। বেশ কয়েক মাস কাটিয়ে দিলাম এই করে। কিন্তু ওর বায়না থামে না আর। আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার প্রথম কিছুটা পাকা রাস্তা ছিল, কিন্তু তারপর মাঠ পেরিয়ে যেতে হত। পাকা রাস্তা ছেড়ে মাঠে নামার পরে আমি একদিন বাধ্য হয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, বোস সাইকেলে।‘ আমার বন্ধুরা একটু আগেই নিজের নিজের বাড়ির দিকে চলে গেছে। আমি সাইকেলটা ধরে রেখে বুকুনকে চড়া শেখানোর মধ্যেই খেয়াল করলাম এই প্রথম একটা মেয়ের অত কাছাকাছি আছি আমি। সাইকেলের সিটটা শক্ত করে ধরে আছি যাতে ও না পড়ে যায়। বেশ মজা পেলাম আমার সদ্যপ্রাপ্ত শিক্ষকতার কাজটা। বুকুন বলল, ‘তুই আমাকে চালিয়ে নিয়ে চল। আজ আর শিখব না। পা ব্যথা করছে।‘ কাকার সাইকেলে আবার পেছনে কেরিয়ার ছিল না, সামনে বাস্কেট লাগানো ছিল। তাই বুকুনকে সাইকেলের রডেই উঠতে হল। এসবে ও অভ্যস্থ বাবা কাকাদের সাইকেলে চেপে চেপে। আমি সাইকেলে উঠে বসার পরে বুকুনও উঠল। আমার বুকটা একটু ধুকপুক করছে। ও কিন্তু বেশ স্মার্টলি একদিকে সাইড করে রডের ওপরে চেপে বসে পড়ল। হ্যান্ডেলটা ধরে বলল, ‘কী রে রবিদা, চল!’ আমি প্যাডেল করতে লাগলাম। শীতের বিকেল। গ্রামের দিকে তখন বেশ ঠান্ডা। কিন্তু আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। সোয়েটার পড়েও গরম লাগছে বেশ। ওর হাত আমার হাত ছুঁয়ে রয়েছে। ওর চুলের গন্ধ পাচ্ছি। ও কীসব যেন বকবক করছিল, আমার কানে সেসব ঢুকছিল না তখন। হার্টের শব্দটা যেন সেদিন এমনি এমনি-ই শুনতে পাচ্ছি। এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে খেয়াল করি নি মাঠের রাস্তায় একটা বড়সড় মাটির ঢেলা পড়েছিল। সেটাকে শেষ মুহুর্তে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্সটা গেল আর হুড়মুড় করে পড়লাম দুজনে – সঙ্গে সাইকেলটা। বুকুনের ‘আআআআ পড়ে গেলাআআম’ শুনেই আমার সম্বিৎ ফিরল। কিন্তু ততক্ষণে সাইকেল আর আমার নিয়ন্ত্রনে নেই। আমি আর বুকুন আছাড় খেলাম.. প্রায় জড়াজড়ি করে, আমাদের ওপরে পড়ল সাইকেল। কিন্তু সেই বয়সেও শিভালরি-টা তো দেখাতে হবে। তাই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। তারপরে সাইকেলটা এক ঝটকায় তুলে নিয়ে স্ট্যান্ড করালাম। বুকুন তখনও পড়ে আছে। ওকে হাত ধরে তুললাম। তারপর দেখি ওর সাদা সালোয়ার কামিজটায় ধুলো লেগে গেছে বেশ। ‘কী রে লাগল?’ ‘তুই কি কানা? আমি বলছি সামনে বড় মাটির ঢেলা দেখ দেখ – তোর কানে ঢোকে নি?’ কথাটা বলতে বলতে নিজের সালোয়ার কামিজটা ঝাড়ছিল ও। আমি বললাম, ‘আমিও দেখেছি। তুই ছিলি বলে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্স হারালাম। এ বাবা তোর ড্রেসটা গেল। ইশ কতটা ধুলো লেগেছে রে।‘ বলে আমিও ওর সঙ্গে ধুলো ঝাড়ায় হাত লাগাতেই বুকুন বলল, ‘থাক তোকে আর আমার জামা থেকে ধুলো ঝাড়তে হবে না।‘ আমি ওকে আরও একটু ছুঁয়ে নেওয়ার আশায় বুকুনের কথায় কান না দিয়ে ওর পিঠ, কোমর আর কোমরের পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে দিলাম। নিজের অজান্তেই বোধহয় একটু চাপটাপও দিয়ে দিয়েছিলাম। এবার বুকুন ধমক দিল, ‘এই রবি দা! কী হচ্ছে ! ধুলো ঝাড়ার নাম করে এদিক ওদিক হাত দিচ্ছিস না? জেঠিকে বলে দেব কিন্তু!’ বলে একটা ফিচেল হাসি দিল। আমি বললাম, ‘তোকে তো হেল্প করছিলাম। পেছন দিকে কত ধুলো লেগেছে!’ ও নিজেই নিজের পেছন দিকটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, ‘তোকে আর হেল্প করতে হবে না। বাড়ি চল। পায়ে এমনিতেই ব্যথা ছিল, এখন আরও ব্যথা করছে।উ:’ ‘হাঁটতে পারবি?’ ‘হুম। আস্তে আস্তে চল।‘ দুপা যেতে না যেতেই আবারও কঁকিয়ে উঠল বুকুন। ‘উফ। কোমরে লেগেছে রে খুব। এদিকে কাৎ হয়ে পড়লাম তো। তুই একটা গাধা জানিস। আবার আমাকে সাইকেল চালাতে শেখাবেন উনি,’ ধমক দিল বুকুন। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। শীতের বিকেলে আলো বেশ কমে এসেছে, কিন্তু ওর মুখে চোখে ব্যথার ছাপ স্পষ্ট। ‘তুই সাইকেলে ওঠ বুকুন। আর ফেলব না। হেঁটে বাড়ি যেতে পারবি না।‘ ‘তোর সাইকেলে আমি আর উঠছি না। তুই বরঞ্চ একটু দাঁড়া, এখানটাতে একটু বসি। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।‘ রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ বসে রইল ও। আমিও পাশেই বসলাম। আমাকে সমানে ধমক দিয়ে চলল আর নিজেই কোমরটা মাসাজ করতে থাকল বুকুন। একবার ভাবলাম যে বলি আমি কোমরটা একটু টিপে দেব কী না, কিন্তু ধুলো ঝাড়তে গিয়ে যা ঝাড় খেয়েছি, তারপরে আর কোমরে মাসাজ করে দেওয়ার কথা বলি!!! ‘চল রবি দা। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। মা কী ভাবছে কে জানে! সাইকেলেই নিয়ে চল,’ বলল বুকুন। আবারও ওকে সাইকেলের রডে উঠিয়ে প্যাডেল ঘোরালাম। এবার বেশীই সতর্ক হয়ে। কদিন পরেই সরস্বতী পুজো। সেসময়ে তো আর ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না। আমাদের কাছে সরস্বতী পুজোটাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেদিন একটু স্বাধীনতা দিত বাবা মায়েরা। বাড়ির পুজোতে কোনও মতে অঞ্জলি দিয়েই সাইকেল নিয়ে ছুটেছিলাম। বুকুন বলে দিয়েছিল আজ ওর বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরবে, ওকে যেন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। আবার ফেরার পথেও যেন আসি। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যেন কোথাও না চলে যাই। বুকুনকে ওর বাড়ি থেকে ডাকতে গেলাম। সে দেখি বাসন্তী শাড়ি আর ব্লাউজ পরে সেজেগুজে রেডি। কাকিমা বলল, ‘রবি একটু প্রসাদ খেয়ে যা।‘ বসলাম। প্রসাদ কোনও মতে খেয়ে নিয়েই দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। কাকিমা বলে দিলেন, ‘বিকেল বিকেল ফিরবি। দূরে কোথাও যাস না যেন।‘ আমরা মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে রওনা হলাম। ‘শাড়ি পড়ে সাইকেলে বসতে পারবি?’ জিগ্যেস করলাম। ‘হেঁটেই চল না আজ। অ্যাই রবিদা, কেমন লাগছে রে আমাকে শাড়ি পড়ে?’ ওর দিকে একটু তাকিয়ে নিয়ে বললাম, ‘দা-রু-ণ।‘ একটু যেন লজ্জা পেল। আজকের আসল মজাটা তো লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া হবে আজ – বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি। মেয়েরাও সব বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে পরী সেজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের স্কুলের পুজোর পরে প্রসাদ আর দুপুরে লুচি ছোলার ডাল আর আলুর দমের প্যাকেট নিয়ে আমরা কজন বন্ধু বিলের মাঠের দিকে গিয়েছিলাম। লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য ওর থেকে যে ভাল জায়গা আর হয় না, সেটা আমাদের আগের কোনও ব্যাচের ছেলেরা অনেক বছর আগে ঠিক করেছিল। তারপর থেকে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ছেলেদের সিগারেট খাওয়ায় হাতেখড়ির পার্মানেন্ট জায়গা বিলের মাঠ। একদিকে বিল আর অন্যদিকে বড় মাঠের ধারে ঝোপঝাড়। ঝোপের আড়ালে বসে পড়লে কারও দেখার কোনও চান্স নেই। আর এদিকটায় কেউ সকাল-দুপুর কোনও সময়েই বিশেষ আসে না। সন্ধের পরে শুনেছি নেশা করতে আসে কেউ কেউ। বিলের মাঠে যাওয়ার জন্য দুটো সিগারেট নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে একটা দেশলাইয়ের বাক্স। সবই ঝাড়া। আমাদের কাউকেই গ্রামের দোকানে সিগারেট কিনতে দেখলেই বাড়িতে পৌঁছনর আগেই খবর চলে যাবে। তারপর যে কী হবে, সেটা আর নাই-বা বললাম। তাই অতি কষ্টে যোগাড় করা হয়েছে সিগারেট দুটো। বিলের মাঠে গিয়ে তো দেখি আরও আমাদের বয়সী আরও কয়েকজন সেখানে হাজির। তারমধ্যে আবার আছে আমাদের লাল্টু মার্কা ফার্স্ট বয় শ্যামলও। ও যে স্যারেদের চর, সেটা আমরা সবাই জানি। তাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও নিজেই আশ্বস্ত করল, যে ‘প্রমিস কাউকে বলব না। বললে তো আমিও কেস খাব রে শালা।‘ সেই প্রথম সিগারেট খাওয়া। সকলেই কেশে অস্থির। কারও কাছে জলও নেই। কোনওমতে সিগারেটগুলো শেষ করে পুজোর কাছে ফিরে এলাম সবাই। স্কুলের টিউবওয়েলে ভাল করে মুখ টুখ ধুয়ে আবারও একটু প্রসাদ খেয়ে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কেউ বলল, ‘চল পান খাই।‘ সকলে মিলে পান কিনে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে করতেই খেয়াল হল, আরে বুকুন তো বলেছিল ওকে ডাকতে। আমি বন্ধুদের বললাম, ‘আমি চলি রে। গার্লস স্কুলের বুকুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।‘ ওরা একটু আওয়াজ দিল আবারও, ‘বাড়ি যাবি তো নাকি অন্য কোথাও?’ ‘ধুর শালা।‘ সাইকেল চালিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম বুকুনের স্কুলে। এদিক ওদিক তাকাতেই কোথা থেকে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে বুকুন এসে হাজির। ‘কীরে রবিদা, এত দেরী করলি? প্রসাদ খাবি তো?’ ওর বন্ধুদের কে একজন যেন বলল, ‘ভাল করে প্রসাদ খাওয়া রবিকে।‘ এই আওয়াজ দেওয়াতে বুকুনও একটু লজ্জা পেল। বলল, ‘প্রসাদটা খেতে খেতেই চল।‘ ওর দুই বন্ধুও স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এল। গেটের একটু বাইরে দেখি আমার আরও দুই বন্ধু। ‘কি রে তোরা এখানে? ভেতরে গিয়ে প্রসাদ নিয়ে আয়।‘ ওরা দুজন আমাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেছে মনে হল। বুকুন আর ওর অন্য দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কী যেন ফিস ফিস করে বলল। বুকুন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘অ্যাই রবিদা, এখনই বাড়ি যাবি? নাকি একটু বিলের মাঠে যাবি রে? আমার বন্ধুদুটোর সঙ্গে তোদের স্কুলের ওই দুটো ছেলে বিলের মাঠে যাচ্ছে। যাবি তুই?’ এবার আমার ঘাবড়ে যাওয়ার পালা। বিলের মাঠে তো আমরা সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম। এরা কী করতে যাবে! ওকে বললাম, ‘কেন রে বিলের মাঠে কী?’ বুকুন আবারও গলা নামিয়ে বলল, ‘ধুত গাধা, বুঝিস না? ওরা প্রেম করে রে হাঁদা। অন্যদিন পারে না তো, আজ একটু তাই যাবে।‘ ‘কী করতে যাবে ওখানে?’ ‘তোকে বুঝতে হবে না। তুই যাবি তো চল। নাহলে বাড়ি চল। আমার বন্ধুদুটো আসলে একটু ভয় পাচ্ছে ছেলেদুটোর সঙ্গে যেতে। এদিকে প্রেম করবে, এদিকে আবার ন্যাকামি।‘ ‘চল তাহলে।‘ ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা আমার। বিলের মাঠে লোকচক্ষুর আড়ালে কী করে ওরা দুই জোড়া সেটা জানার আগ্রহও আছে, আবার ভয়ও আছে। প্রথমে তিনজনে কাছাকাছিই হাঁটছিলাম। তারপরে একটু আগুপিছু হয়ে গিয়ে তিন জোড়া আলাদা হয়ে গেল। জোড়ায় জোড়ায় সবাই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছে। অন্য মেয়েদুটোর মাথা নীচু। প্রেম করতে যাচ্ছে, আবার লজ্জাও পাচ্ছে। সেদিক থেকে আমি আর বুকুন ঠিক আছি। আমরা তো আর প্রেম করি না! ওকে বললাম, ‘শোন, বিলের মাঠে গিয়ে ওরা কী করবে রে?’ ‘তোকে বলছি না গাধা প্রেম করতে যাচ্ছে। আমি আর তুই গল্প করব, হয়েছে?’ বেশী কথা বললাম না আর। আমি একটু আঁচ করতে পারছি কী ধরণের প্রেমের জন্য বিলের মাঠের আড়াল দরকার হতে পারে এদের। বিলের মাঠে পৌঁছিয়ে বাকি চারজন দুদিকে চলে গেল একটু ঝোপের আড়ালে। আমি আর বুকুন একটা ফাঁকা জায়গায় ঘাষের ওপরে বসে পড়লাম। ও যেন একটু বেশী কাছাকাছিই বসল আমার। এটা সেটা গল্প হচ্ছিল, মাঝে মাঝে ওই দুই জোড়ার হাসির খিক খিক শব্দ পাচ্ছিলাম। হঠাৎ বুকুন বলল ‘এই রবিদা। একটা মজা করবি? চল ঝোপের এপাশ থেকে ওদের একটু ঘাবড়ে দিই গিয়ে।‘ মজা পেলাম। বুকুন উঠে দাড়িয়ে নিজের শাড়ি পড়া পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে নিল। ঘাস- ধুলো লেগে গেছে একটু। আমরা যেন কোনও অভিযানে যাচ্ছি, এইভাবে ও আমার হাতের বাজুটা ধরে দুই জোড়ার একটা জোড় যে ঝোপের পেছনে ছিল বলে মনে হল, সেদিকে নিয়ে গেল। ঠিকই ধরেছে। এটার ওদিকেই আছে। মিনিট কয়েক কান পাতলেই ফিস ফিস শব্দ আসছে, আর কিছু অচেনা শব্দ। বুকুন আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল একবার, তারপর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলল। গলাটা একটু মোটা করে নিয়ে বলল, ‘এইইইই কেরে ওখানে!!!’ বলতেই ওদিক থেকে আসা সব শব্দ বন্ধ। সেকেন্ড দশেক পরে ঝোপের ধার থেকে বুকুনের একটা বন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই শয়তান আড়ি পাতা হচ্ছে? তোর গলা চিনি না না?’ বুকুনের বন্ধুটার শাড়িটা দেখলাম বেশ অবিন্যস্ত। চুলটাও একটু যেন অগোছালো। বুকুন বলল, ‘আর কতক্ষণ রে। বাড়ি চল এবার। আমি আর রবিদা তো বোর হচ্ছি।‘ পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল আমাদের বিমল। ‘তোরা থাক না নিজের মতো। আমাদের পেছনে কাঠি করছিস কেন রে!’ ডিসটার্ব করায় বেশ রেগে গেছে মনে হল। আমি বুকুনের হাত ধরে টানলাম। ও হিহি করে হেসে বলল, ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা। দেখি আরেক জোড়া কী করছে।‘ ওই ঝোপ থেকে সরে এসে অন্য জোড়টা আর খুঁজতে দিলাম না বুকুনকে। ‘তুই কেন ওদের পেছনে লাগছিস রে। ছাড় না। আচ্ছা ওরা কী করছিল বল তো। তোর বন্ধুর শাড়িটা দেখলাম অগোছালো!’ আমার হাত ধরে মাটিতে বসালো বুকুন। ‘রবি দা তুই কি সত্যিই বুঝিস নি ওরা কি করছে না কি জেনেও বোকার মতো জিগ্যেস করছিস রে?’ ‘আন্দাজ করছি, তবে ঠিক কী করছে জানি না।‘ বুকুন বলল, ‘দেখ -- ওরা এটা করছে....’ এত বছর পরে হঠাৎ সরস্বতী পুজোর সেই দুপুরটা মনে পড়ে গেল। -- Last edited by uttam4004 : 25th January 2017 at 10:34 PM. |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#4
|
|||
|
|||
৩ ‘কী রে রবিদা তোকে না বললাম প্যান্ডেলে দাঁড়া আসছি আমি। তুই এতটা চলে এসেছিস। আমি ভাবছি গেল কোথায় লোকটা!’ ওর কথায় সম্বিৎ ফিরল আমার। সিগারেটটা ধরিয়ে সাইকেল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে এসেছি। ‘এই একটু হাঁটছিলাম আর কি, চলে তো যাই নি,’ নিজের খামখেয়ালীপনায় লজ্জা পেয়ে বললাম আমি। ‘বউদি, বাচ্চা এল না অঞ্জলি দিতে?’ ‘ওরা তো আসেই নি আমার সঙ্গে। একা এসেছি।‘ ‘ওহ। সে কি রে! পুজোর সময়ে ওদের কোথায় রেখে এলি!’ ‘ওদের এই গ্রামের পুজো ভাল লাগবে না। শহরের ভীড়- পুজো দেখা, বাইরে খেতে যাওয়া – এসবই পছন্দ ওদের। তাই একাই এলাম। তা তোর খবর কি? তুই কোথায় থাকিস এখন? কতদিন পরে দেখা হল!’ ‘হ্যাঁ রে। প্রায় কুড়ি বছর, না রে?’ ও জিগ্যেস করল। ‘হুম, বছর কুড়ি তো হবেই.. এম এস সি শেষ করে এম বি এ করে চাকরীতেই তো ঢুকেছি পনেরো বছর হয়ে গেল।‘ ‘আবার তোর বিয়ে যখন হল, তখন তো আমি শ্বশুরবাড়ি চলে গেছি। মার কাছে শুনেছিলাম তোর বিয়ের খবর।‘ মাথাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য নামিয়ে নিল বুকুন। তারপর একটা বড় শ্বাস ছাড়ল যেন মনে হল। সোজাসুজি তাকাল আমার দিকে। ‘তুই তো সাউথ কলকাতায় থাকিস না রে? আমার এক দেওর ওদিকে ফ্ল্যাট কিনেছে।‘ ‘তুই থাকিস কোথায় এখন? জামশেদপুর না কোথায় বিয়ে হয়েছিল না তোর?’ আমি জানতে চাইলাম। ‘হুম বিয়ের সময়ে ও জামশেদপুরে থাকত। বর তো টাটায় কাজ করে। তবে বছর তিনেক হল আমরা কলকাতাতেই। সল্টলেকে অফিস থেকে ফ্ল্যাট দিয়েছে রে।‘ ‘ও তাই? সল্ট লেকে থাকিস? আমার তো অফিস সেক্টর ফাইভেই। দেখ কী কান্ড, রোজ যাতায়াত করি, কখনও দেখা হল না এত বছরেও!’ ‘দেখা না হয়ে ভালই হয়েছে মনে হয়। যাক শোন কদিন থাকবি রে তুই?’ ‘লক্ষ্মীপুজো অবধি তো আছি।’ ‘আমাদের বাড়িতে আয়। বরের সঙ্গে আলাপ করবি। এক কাজ কর। এখনই চল। আজ বাড়িতে লুচি বেগুনভাজা হবে।‘ ‘তোর বর অঞ্জলি দিতে এল না?’ ‘না কাল আসবে ওরা সবাই। চল বাড়ি চল।‘ ‘মা তো বোধহয় বাড়িতে কী সব ব্যবস্থা করছে। চল তুই বরং আমাদের বাড়িতে একটু চা খেয়ে যাবি।‘ হাঁটতে হাঁটতে আমরা বেশ অনেকটা চলে এসেছি। সেই যেখানে কাঁচা রাস্তায় বুকুনকে সাইকেলে নিয়ে যেতে গিয়ে পড়েছিলাম, সেই জায়গাটার কাছাকাছি প্রায়। ‘তোর মনে আছে রবিদা, আমাকে সাইকেল চালানো শেখাতিস এই রাস্তায়! আর একবার সাইকেল থেকে ফেলে দিয়েছিলি?’ ‘হ্যাঁ। মনে পড়ছিল অঞ্জলি দিয়ে প্যান্ডেলের বাইরে এসে সিগারেট খাচ্ছিলাম যখন তখন ভাবছিলাম ওইসব,’হাসতে হাসতে বললাম বুকুনকে। ‘কত্ত পাল্টে গেছে না রে রবিদা জায়গাগুলো!’ ‘হুম’ ‘সেই বিলের মাঠ তো পুরো হাওয়া হয়ে গেছে জানিস, কত্ত বাড়ি হয়েছে ওখানে!’ কত্ত বলতে গেলে সেই ছোট থেকেই একটা বাড়তি ত লাগায় বুকুন। ‘হুম জানি। বছরে এক দুবার তো আসিই আমি। একবার তো বাড়ি করব বলে ওখানে জমি কিনব ভেবেছিলাম।‘ হি হি করে হাসতে হাসতে বুকুন বলল, ‘সে-ই বিলের মাঠে তুই জমি কিনবি ভেবেছিলি! হিহি... মনে আছে সরস্বতী পুজোর দিনটা?’ সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা আমার হাতটায় আলতো করে ছুঁয়ে দিল বুকুন হাসতে হাসতেই। ‘ফাজলামি হচ্ছে?’ কপট রাগ দেখালাম ছোটবেলার সেই স্মরণীয় দিনটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। ‘বাকি চারজন তো ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে অবাক। উফফফফফফফ,’ হাসতে হাসতে বলল বুকুন। ছোটবেলার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যেতে এবার এত বছর বয়েসে এসে আমারই লজ্জা করতে লাগল। বুকুনের সেসব ব্যাপার কোনও দিনই ছিল না, এখনও নেই। ফাজলামি তে সে চিরকালই ওস্তাদ। ‘তুই যে কতটা আনাড়ি ছিলি, সেদিন বুঝেছিলাম। চুমুটাও ভাল করে খেতে পারিস নি। ইশশ।‘ ‘আর তুই যেন ওসব কত করেছিলি তখন!’ আমরা যেন ফিরে গেছি সেই ছোটবেলায়। আমাদের খেয়ালই নেই যে প্রায় পচিশ বছর পেরিয়ে গেছে সেইসবের পরে। আমি কলকাতায় কলেজ-দিল্লিতে ইউনিভার্সিটি, এম বি এ পড়া শেষ করে চাকরী পাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছি প্রায় ৯ বছর হলো। চাকরী পাওয়ার একটু তাড়াতাড়িই ছিল আমার। মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম চাকরী পেয়েই মাকে বলব বুকুনের কথা। কিন্তু এম এস সি পাশ করে এম বি এ-তে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই খবর পেয়েছিলাম যে বিয়ে ঠিক হয়েছে বুকুনের। পুরণো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির কাছে চলে এসেছি, খেয়াল করি নি। বাড়ির রাস্তাটা দেখেই ওকে বললাম, ‘চল বাড়িতে চা খেয়ে যাবি। মা খুব খুশি হবে।‘ ‘তুই চল না আমাদের বাড়িতে। বরের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেই আমার লুচি ভাজা হয়ে যাবে।‘ ‘চল তাহলে, তোর বরের সঙ্গে আলাপটা করে আসি’ বললাম আমি। -- |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#5
|
|||
|
|||
৪ ওদের বাড়িতে ঢুকতেই কাকিমার সঙ্গে দেখা। কাকিমা তো আমাকে প্রথমে চিনতেই পারেন নি। বহুদিন পরে দেখছেন, তার ওপরে আজকাল চোখেও নিশ্চই ভাল দেখতে পান না। প্রণাম করে বললাম, ‘কাকি, আমি রবি। দত্ত বাড়ির রবি।‘ ‘র—বি... বাবা কত বছর পরে দেখছি রে তোকে! কেমন আছিস বাবা?’ ‘ভাল আছি। তুমি কেমন আছ গো?’ ‘আর এই বয়সে থাকা না থাকা। তা কবে এলি রে তোরা?’ ‘তোরা না, আমি একাই এসেছি। তোমার বৌমা নাতি কলকাতায় পুজোর আনন্দ ছেড়ে গ্রামে আসতে রাজী নয়।‘ কথার মাঝেই বাড়ির ভেতর থেকে বুকুন ওর বরকে ডেকে এনেছে। আলাপ হল তার সঙ্গে। লুচি বেগুনভাজা চা দিয়ে আড্ডা ভালই জমেছিল। বুকুনের বর এমনিতে বেশ আড্ডাবাজ লোক। ঘন্টাখানেক আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরলাম। কদিন থাকব, আবারও যাব বলে আসতে হল। ওদেরকেও বললাম বাড়িতে আসতে। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে উঠে পুরণো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরে ফোন করেছিলাম বউকে। তারা তখন হোল নাইট ঠাকুর দেখতে বেরচ্ছে। তাড়াহুড়ো ছিল পিয়ালীর। সাজছে। তার মধ্যেই বললাম , ‘জানো তো আজ প্যান্ডেলে বুকুনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! বলেছিলাম তোমাকে ওর কথা মনে আছে?’ পিয়ালীর গলার স্বরটা দেখলাম একটু পাল্টে গেল। জিগ্যেস করল, ‘ও তোমার সেইইইই বুকুন? প্রথম প্রেম? বাহ। সে-ও গেছে বুঝি। বাহ। ভালই তো।‘ একটানা কথাগুলো বলে গেল। বুঝলাম অভিমান হয়েছে। বুকুনের সঙ্গে যে ছোটবেলায় সম্পর্ক ছিল, সে কথা পিয়ালীকে বলেছিলাম। মেয়েরা যে এসব ব্যাপার মনে রেখে দেয় এত বছর সে কি আর জানতাম! খচে গেল বউ! ‘ঠিক আছে এখন রাখছি। বেরতে দেরী হয়ে যাবে,’ বলেই কট করে কেটে দিল লাইনটা। আমি ভাবলাম, ধুর, কী দরকার ছিল আমার বুকুনের কথা জানানোর ওকে! বুকুনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে মুডটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল, গেল নষ্ট হয়ে! তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকে পড়লাম। সিগারেট ধরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম, মেইল, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ গুলো চেক করব বলে। হোয়াটস্ অ্যাপে বেশ কিছু মেসেজ এসেছে – বেশীরভাগই বন্ধু আর অফিস কলিগদের বিভিন্ন গ্রুপের – পুজোর শুভেচ্ছা আর জোকস। একটা অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে রোমান হরফে লেখা: ‘কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?’ কার মেসেজ, সেটা বোঝার জন্য ডিসপ্লে প্রোফাইলটাতে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই স্ক্রীণে ভেসে উঠল সকালে পুজোর প্যান্ডেলে দেখা হওয়া মাঝবয়সী বুকুনের ছবি। সকালে আমার নম্বর নিয়ে নিয়েছিল ও, আমারই ওর নম্বরটা নেওয়া হয় নি। বুকুনের ডি পি-টাতে আঙুল বোলাতে বোলাতে অনেক পুরণো কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠে যে কতক্ষণ বুকুন নিজের মুখের ওপরে আমার মাথাটা চেপে ধরে রেখেছিল, তা অবশ্য এতদিন পরে আর মনে নেই। কিন্তু সেদিন যে স্বাদ পেয়েছিলাম আমি ,সেটা এখনও কিছুটা মনে আছে – সেই প্রথম তো! ঘটনায় কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম প্রথম কিছুক্ষণ। তবে তারপরে আমিও বুকুনকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেটা বেশ মনে আছে। আমাদের দুই জোড়া হাত তখন আর আমাদের কন্ট্রোলে ছিল না। এখন যেমন মোবাইলের হ্যান্ডস্ ফ্রি ব্যবহার করি, সেদিনও আমরা হ্যান্ডস ফ্রি হয়ে গিয়েছিলাম অনেকটা। অচেনা জায়গায় কি যে খুঁজছিলাম আমরা দুজন, সেটা তখনও ঠিকঠাক জানতাম না আমরা। আমাদের সম্বিৎ ফিরেছিল ‘এ কি রে...’ শব্দগুলো কানে যেতে। ঝোপের আড়াল থেকে আমাদের একজোড়া বন্ধু-বান্ধবী উঠে এসে আমাদের খোলা জায়গায় ওইভাবে থাকতে দেখে রীতিমতো শকড হয়েছিল। আমরা ঝটপট উঠে দাঁড়িয়েছিলাম লজ্জা পেয়ে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বুকুন নিজের বাসন্তী রঙা শাড়িটা থেকে ধুলো আর শুকনো ঘাসটাসগুলো ঝেড়ে নিয়েছিল কোনও কথা না বলে। ওর ফর্সা মুখটা যেন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো লাল হয়ে গিয়েছিল। উঠে দাঁড়িয়েছিলাম আমিও। ঝোপের ওপাড়ে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আসা বুকুনের বান্ধবীটি ফিক ফিক করে হেসে যাচ্ছিল তখনও। ওর সঙ্গে থাকা আমার বন্ধুটি বয়সে অনেকটাই বড় – বেশ কয়েকবার ফেল করে আমাদের সঙ্গে পড়ত। সে মিচকি হেসে বলল, ‘তা ঝোপের ওপাশে গিয়ে করলেই পারতি!’ বুকুনের মুখ তখনও লাল। আস্তে আস্তে বলেছিল, ‘রবিদা দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি চল।‘ কথাগুলো বলেই ও এগিয়ে গিয়েছিল একটু। বাকি দুজন ওখানেই থেকে গিয়েছিল – আরেক জোড়ার অপেক্ষায়। সারা রাস্তা আর কোনও কথা বলে নি বুকুন। মাথাটা নামিয়ে নিয়ে রাস্তা দিয়ে তড়তড় করে হেঁটে ছিল আমার সাইকেলের পাশে পাশে। সেদিন আর সাইকেলে ওঠার কথা বলি নি ওকে। সামনে পরীক্ষা, কিন্তু সেদিন বিলের মাঠের কথা ভাবলেই মনটা হু হু করে ওঠে। বুকুনের সঙ্গে দেখা যে একেবারে হয় না, তা না। কখনও আমার মা ওদের বাড়িতে কিছু খাবার বানিয়ে পাঠায়, আবার কখনও ওর মা পাঠায় ওকে - হাতে খাবারের কৌটো। পুরণো দিনের সেইসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে হোয়াটস অ্যাপে লিখে দিয়েছি, ‘না রে ঘুমোই নি। জাস্ট খাওয়া হল।‘ মেসেজটা পাঠাতেই দুটো নীল রঙের টিক চিহ্ন দেখা গেল ওটার নীচে, ডান দিকে। ওর ফোন নম্বরের নীচে দেখলাম অনলাইন বুকুন। ওর নম্বরটা সেভ করে রাখাটা কি ঠিক হবে? পিয়ালী যদিও আমার মোবাইল ঘাঁটাঘাটি করে না.. তবুও! থাক! কী দরকার। বুকুন ‘টাইপিং’ দেখা গেল। অর্থাৎ কিছু একটা মেসেজ লিখছে। আমি নিজেই লিখলাম, ‘তোদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে?’ ওর উত্তর এল, ‘কাল অঞ্জলি দিতে যাবি তো? নটায় অঞ্জলি কিন্তু পুরুত মশাই আজ বলে গেছে।‘ তারপরে আমার দ্বিতীয় মেসেজের উত্তর: ‘ছেলে আর মাকে খাইয়ে দিয়েছি। আর আমি এখনই খাব কি? আমার বর তো আড্ডা দিতে গেছে টাউনে। ওর বেশ কিছু বন্ধু আছে ওখানে।‘ ‘ও আচ্ছা। তোর বর কি টাউনের ছেলে না কি?’ ‘না। ওদের বাড়ি তো কলকাতাতেই। কিন্তু বিয়ের পরে কী করে যেন সব আলাপ হয়েছে এদের সঙ্গে। জানি না আমি ঠিক। বলে না সে সব। মদ খাওয়ার সঙ্গী এরা।‘ ‘ওহো। ভালই তো। শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় মদ খাওয়ার সঙ্গী থাকলে মন্দ কী?’ ‘হ্যাঁ। তা আর মন্দ কী! শ্বশুর-শাশুড়ীর সামনে মাতাল হয়ে রাতবিরেতে ফিরে ঝামেলা করবে – খারাপ আর কি বল!’ ‘ও। মদ খেয়ে ফিরে ঝামেলা করে না কি?’ ‘বাদ দে ওসব কথা। এত্তদিন পরে দেখা হল তোর সঙ্গে। ওসব কথা তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন।‘ যেমন কথায়, তেমনই লেখাতেও – কতদিনকে ‘কত্তদিন’ লিখবেই বুকুন। -- |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#6
|
|||
|
|||
৫ আমি যখন কলকাতায় কলেজে পড়তে চলে গেলাম, তারপর থেকে ওর বিয়ে হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যত চিঠি লিখেছিল বুকুন – সবগুলোতেই থাকত ওর এই কথাগুলো – ‘কত্তদিন’, ‘এত্তবড়’.. আরও কতকিছু যে লিখত মেয়েটা – সব চিঠি অনেকদিন রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এম বি এ পড়ার সময়ে যেদিন মায়ের চিঠিতে জানতে পারলাম বুকুনের বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার পরের দিন ক্লাসে না গিয়ে ফাঁকা হোস্টেলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সঅঅঅব চিঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। ঘরে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। সেই সরস্বতী পুজোর বিকেল থেকেই মনে মনে বুকুনকে আমার জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছিলাম। কথাটা ওকে জানিয়েছিলাম আরও কিছুদিন পরে – আমার ফাইনাল পরীক্ষার পরে। কথাটা শুনতে শুনতে আমার চোখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল ও, আর তারপরেই মাথাটা নামিয়ে নিয়ে আমার হাতে আলতো করে একটা ভালবাসার চিমটি কেটেছিল। ওর মা আর আমার মা-ও বুঝত যে আমাদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার মা জানতে চেয়েছিল একবার – কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছিলাম। ওর মা কিন্তু জানত সবটাই। বুকুন সবই বলেছিল – শুধু বিলের মাঠের মতো গোপন ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে। কিন্তু প্রায় দুই দশক আগের গ্রামের সমাজ, তাই ওর মা তাঁর স্বামীকে কিছু জানান নি মেয়ের ব্যাপারে। তাই যেদিন এম এ ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ প্রায় পাকা করে এসেছেন বলে ঘোষণা করলেন অফিস থেকে ফিরে, সেদিন মা-মেয়ে প্রথমে হতবাক, আর তারপর বিস্তর কান্নাকাটি আর অশান্তিও করেছিল দুজনে। কিন্তু তার বাপকে নাকি টলানো যায় নি। ছেলে ভাল চাকরি করে টাটায়..এমন ছেলে পাওয়া কঠিন .. তা ও কোনও দাবী নেই ছেলের বাড়ির! এম এ পড়া শেষ করে কী করবে মেয়ে? চাকরী? হা হাহা.. ছেলেরাই চাকরী পাচ্ছে না.. আর মেয়েরা করবে চাকরী.. থাক তো বাড়িতে বসে.. আমার মতো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলে খবরাখবর রাখতে দেশ-দুনিয়ার!!!!! এ সবই নাকি গোটা পাড়াকে জানিয়ে জানিয়ে বলেছিলেন বুকুনের বাবা। আর ওই ঝামেলা চলেছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। ওদের পড়শিরাই জানিয়েছিল আমার মা কে। আমার মায়ের কানে এসেছিল পড়শিদের কাছ থেকে। বুকুন অবশ্য একটা শব্দও জানায় নি আমাকে। হঠাৎই হারিয়ে গিয়েছিল। মায়ের কাছে চিঠিতে জিগ্যেস করেছিলাম কয়েকবার.. প্রথমে একটু এড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরে বলেছিল সবটা। পুরনো সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই খেয়াল করলাম আরও বেশ কয়েকটা মেসেজ এসেছে বুকুনের। ‘আচ্ছা, তোর তো ছেলে, না রে রবি দা?’ কত্ত বড় হয়ে গেছে নিশ্চই! কোন ক্লাস রে?’ ‘নিয়ে এলে পারতি বৌদি আর ছেলেকে’ আমি একটা মেসেজেই জবাব দিলাম: ‘ছেলের ক্লাস টু। ওদের গ্রাম ব্যাপারটাই ভাল লাগে না.. আর পুজোর সময়ে কলকাতা ছেড়ে আসবে?’ ও জবাব দিল, ‘আমি প্রতিবছর আসি। পালিয়ে আসি আসলে রোজকার জীবন থেকে।‘ ‘পালিয়ে আসিস কেন?’ লিখলাম আমি। ‘বললাম না বাদ দে ওসব কথা। তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন রে।‘ হঠাৎই লিখল, ‘তোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একা আছিস রবিদা? ফোন করব?’ এর জবাবে কিছু না লিখে আমি-ই ফোন করলাম। রাত প্রায় এগারোটা তখন – পরস্ত্রীকে সেই সময়ে ফোন করা উচিত কী না সেটা না ভেবেই। একবার রিং হতেই ধরল সে। ঠিক যেভাবে কলকাতা বা দিল্লিতে পড়ার সময়ে আমি ফোন করলেই একবার রিং হতেই ফোনটা তুলে হ্যালো বলত বুকুন। তখন মোবাইল তো দূর অস্ত, বাড়িতে ফোনও ছিল না আমাদের গ্রামের কারও বাড়িতে। টাউনে বুকুনের এক বান্ধবীর বাবা ব্যবসায়ী। তার ফোন ছিল। অনেক দিন আগে থেকে চিঠি লিখে ও জানাত যে কোন সময়ে ও ওই বান্ধবীর বাড়িতে যাবে আর আমরা একটু কথা বলে নিতে পারব। তখন রাত এগারোটার পরে এস টি ডি চার্জ চারভাগের এক ভাগ হয়ে যেত.. কিন্তু দিনের বেলা ফোন করতে আমার পকেট থেকে ভালই টাকা গলে যেত। তাই তিন চার মাস পরে হয়তো মিনিট দুয়েকের কথাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হত আমাদের। ফোন করার দিন-সময় জানিয়ে রাখতাম চিঠি দিয়ে। সেই মতো ও বান্ধবীর বাড়িতে চলে যেত। কয়েকবার যে চিঠি সময়মতো না পৌঁছনয় বা বান্ধবীর বাড়িতে কোনও অসুবিধা থাকায় এরকমও হয়েছে, আমি ফোন করেছি, অন্য কেউ ফোন তুলেছে। আর টাকা গচ্চা গেছে আমার। তবে যখন ফোনে পেতাম আমরা দুজনে দুজনকে, তখন কথাবার্তা শেষ হতো একটা ‘মুআ’ ‘মুআ’ শব্দে.. খুব আস্তে আস্তে বলতে হত সেটা – হোস্টেল থেকে বেশ কিছুটা দূরের এস টি ডি বুথটা একেবারে রাস্তার ওপরে.. আর হয়তো আমার পরে আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছে ফোন করার জন্য। আর বুথে বসে থাকতেন যে মাসীমা, তাঁর কানেও যাতে ওই শব্দগুলো না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হত। তবে সেটাই আমাদের কাছে তখন অনেক পাওয়া.. পরের ছুটিতে বাড়ি আসার আগে হস্টেলের কমন বাথরুমের বন্ধ দরজার ভেতরে তা দিয়েই কাজ চালাতে হত আমাকে! ছুটিতে বাড়ি এলে অবশ্য সেই সব না-পাওয়া ভাল করেই পুষিয়ে দিত বুকুন – বিলের মাঠে – ঝোপের পেছনে। কোনও কার্পণ্য করত না ও – তবে যেটা করতে আমার খুব ইচ্ছে করত, সেটা কখনও করতে দেয় নি। ওর এক কথা – ‘এখন না বউভাতের রাতে হবে। সেদিনের জন্য কিছু তো বাকি রাখ।‘ সেই রাত আমাদের দুজনের জীবনে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু বউভাতের রাতে বিছানায় আমাদের দুজনের বিছানাতেই অন্য মানুষ ছিল। ‘এত্তদিন পরে.. যাহ, আমিও তো তোর মতো এত্ত বলে ফেললাম..’, খুব চাপা স্বরে কথাগুলো বললাম বুকুনকে ওর মোবাইলে। এখন আর এস টি ডি বুথ থেকে বান্ধবীর বাড়ির ফোনে নয় – দুজনেই কথা বলছি একান্ত গোপনীয়তায় – রাতের আঁধারে – যখন আমাদের দুজনের বউভাতের রাতের দুই পার্টনার কেউই কাছে নেই। ও পাশ থেকে খিল খিল করে হেসে উঠল বুকুন.. ‘বল কত্তদিন পরে ফোনে কথা হচ্ছে.. সেই আগের মতো চিঠি দিয়ে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ফোন ধরে তিন মিনিট হওয়ার আগেই কথা শেষ করতে হবে না এখন’ বলেই আবার হাসি। ওর গলার স্বরটা যদিও এখনও চাপা। ‘সকালে তোকে দেখার পর থেকেই খুব মনে পড়ছে রে রবিদা সেইসব কথা।‘ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলাম। ‘সব কিছুই কি আার নিজেদের চাওয়া পাওয়া মতো হয়ে রে।‘ সেই ছোটবেলা থেকে শেষবার বিলের মাঠে বসে যেদিন চুমু খেয়েছিলাম বুকুনকে – এম এস সি সেকেন্ড ইয়ারের পড়ার সময়ে পুজোর ছুটিতে বাড়ি থেকে ফিরে যাওয়ার আগের দিন বিকেলে - সেদিন পর্যন্ত আমি আর ও তুই তোকারি-ই করে এসেছি আর ও আমাকে চুমু খেতে খেতেও রবিদা বলেই ডেকেছে। একবার জিগ্যেস করেছিলাম বিলের মাঠে দুষ্টুমি করার সময়ে। ‘আচ্ছা, বিয়ের পরে কি আমাকে সবার সামনে রবিদা বলে ডাকবি তুই?’ ‘ইইইশশশ.. বদমাশ.. ..’ বুকে কয়েকটা কিল মেরেছিল বুকুন। ‘তোর জেঠতুতো বউদি যা শয়তান না.. পম্পিদি.. তোর মায়ের কাছ থেকে জেনেছে বোধহয় কিছু.. আমাকে সেদিন কলেজ থেকে ফেরার সময়ে ধরেছিল.. বাড়ি যাওয়ার আগে কী বলে জানিস?? ইইইই বাবাআআআ.. আমি তো লজ্জায় মরেই যাই!’ একটানা বলে গেল বুকুন। সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠের ব্যাপারটার পর থেকেই বুকুন শব্দটা মনে এলেই ‘বুক’ শব্দটাও আমার মাথায় চলে আসত। তা বুকুন যখন বলছিল আমার জেঠতুতো বউদির সঙ্গে ওর কথোপকথোন, তখন বুকুনের সঙ্গে মিল খাওয়া শব্দটা শরীরের যে জায়গাকে বোঝায়, সেখানেই ঘুরছিল আমার হাত দুটো। তখন আমরা দুজনেই এসব ব্যাপারে সপ্রতিভ হয়ে উঠেছি। সেই অবস্থাতেই জিগ্যেস করেছিলাম, ‘বউদি আবার কি বলল?’ ‘বলে কি.. তুই আমার দেওরটাকে তো রবিদা বলে ডাকিস.. তারমানে তুই ওর বোন? আর বোনের সঙ্গে করলে কী বলে জানিস তো.. .. বান.. দিয়ে গালিটাও শুনিয়ে তোর বউদি বলেছিল এবার থেকে আমার দেওরটাকে ওই কথাটা বলেই ডাকব .. আড়ালে.. খুব হেসে পালিয়েছিল তোর বউদি... আমি তো .. মানে.. ইশশ শশ বউদি কী করে কথাগুলো বলল রে.’ আমার হস্তশিল্পের আঘাতের মধ্যেই নিজে নিজে বিলের মাঠে বসে কথাগুলো বলেছিল বুকুন। ‘এ বাবাআআআআ.. আমি বাঞ্চোৎ?’ আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল কথাটা। বেশ জোরে ঘুষি মেরেছিল বুকুন আমার বুকে। তবে আমার আর বাঞ্চোৎ হওয়া হয় নি। -- Last edited by uttam4004 : 26th January 2017 at 11:26 AM. |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#7
|
|||
|
|||
nice
|
|||
Have you seen the announcement yet? |
#8
|
||||
|
||||
Very nice.
Please increase the font size. |
||||
Have you seen the announcement yet? |
#9
|
|||
|
|||
onekdin baad mone hochhe incest r adultry baade valo kichhu pabo.
besh ekta vintage byapar achhe. r lekhar badhon otulonio. jounota derite asleo osubidha nei.. main choritro dutor erkom sundor misti romantic conversation rakhben.. |
|||
Have you seen the announcement yet? |
#10
|
||||
|
||||
পথ চলিতে যদি চকিতে
কভু দেখা হয়....... (ক.ন) |
||||
Have you seen the announcement yet? |
![]() |
Free Video Chat with Indian Girls
|
Thread Tools | Search this Thread |
|
|